প্রায়ই শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে একটি অভিযোগ শোনা যায় যে- অনেক পড়ার পরও পড়া মনে থাকে না। এটা সত্য যে সকলের মস্তিষ্কের ধারন ক্ষমতা এক নয়। দেখা গেছে যে কেউ কেউ অল্প পড়লেই সেটা তার শেখা হয়ে যাচ্ছে আবার অন্যজন অনেকক্ষন পড়েও শিখতে পারছে না। স্কুল জীবনের শুরুর দিকে যারা পড়াশোনার ব্যাপারে ভাল পরিচর্যা পায় তাদের পড়াশোনার ভিত্তিটা একটু বেশিই মজবুত থাকে যার কারনে পরবর্তি স্তরের পাঠসমূহ তার কাছে অনেকটা সহজ বোধ হয়।
আবার “পড়া মনে থাকে না” এমন অভিযোগ যাদের নিয়ে শোনা যায় তাদের মধ্যে দুইটা ভাগ আছে-
ক. পড়াশোনায় মনযোগ দেয় না: পড়াশোনায় মনযোগী হলেই সহজে পড়া মনে রাখতে পারবে। নিজেকে ও অভিভাবকদেরকে সচেতন হতে হবে, পাশাপাশি নিচের কৌশলগুলি অনুসরন করতে হবে।
খ. মেধা কম/ মস্তিষ্কের ধারন ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় একটু কম: আল্লাহ সবাইকে একরকম মেধা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠান না। তাই সবাইকে আইনষ্টাইন-নিউটন হতে হবে এমন কোন কথা নেই আবার সবাই ক্লাসের ফার্স্ট বয়ও হবে না। অন্যরা যেখানে ১ঘন্টায় একটা পড়া শিখে নিতে পারে এদের ক্ষেত্রে সেটা বড়জোর দুই ঘন্টা লাগতে পারে। অর্থাৎ হতাশ হওয়ার কিছু নেই, শুধু একটু বেশি সময় দিয়ে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। মস্তিষ্কের চর্চা করলে তার কার্য্যক্ষমতা বাড়ে সুতরাং ধৈর্য্যসহকারে চেষ্ঠা করলে একটা সময় অন্যদের ডিঙিয়ে যাবেন।
পড়া মনে রাখার ১১টি কৌশল নিচে দেয়া হল। যা অনুসরণ করলে শিক্ষার্থী বা চকরী প্রত্যাশিগণ অবশ্যই সুফল পাবেন-
১। পড়ার সঠিক সময় নির্ধারন করুন: শিক্ষার্থীরা সাধারনত ভোর বেলা ও সন্ধা বেলায় পড়াশোনা শুরু করে। তবে বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠার পর আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে সতেজ থাকে এবং এ সময় খুব সহজেই পড়া মনে থাকে। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সন্ধ্যা থেকে রাতের পাশাপাশি গুরুত্ব সহকারে ভোর বেলায় পড়ার অভ্যাস করতে হবে।
২। লক্ষ্য স্থির করে পড়ুন: পড়তে বসলে নিজের লক্ষ্য স্থির করুন। বইয়ের কত পাতা পর্যন্ত কত সময়ের মধ্যে শেষ করবেন তা ঠিক করে নিন। নয়তো মনোযোগ হারাবেন এবং সময়ের অপচয় হবে।
৩। জোরে জোরে পড়ুন: জোরালো কণ্ঠে পড়ুন। জোরে পড়লে মাথায় তথ্য দ্রুত ঢুকে যায়। যেমন একটি গান যখন শোনেন, তখন তা দ্রুত মনে পড়ে। যা পড়ছেন তা নিজের কানে জোরে প্রবেশ করলে দ্রুত মুখস্থ হবে।
৪। রিডিং পড়ার সময় খাতায় লেখুন: রিডিং পড়ার সময়ও খাতা-কলম নিয়ে বসুন। রিডিং পড়ে পাঠ অন্তস্ত করার সময় প্রায়ই পূর্ণ মনযোগ দিতে পারছেন না, মনে রাখতে পারছে না বা কখনো এমন হয় যে বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারছেন না। এক্ষেত্রে পাঠটি রিডিং পড়ার সাথে সাথে জটিল ও কঠিন শব্দ, বাক্য বা সুত্রুলি খাতায় লেখলে তা দ্রুত অন্তস্ত হয় ও দীর্ঘ সময় মনে থাকে।
৫। অর্থ বুঝে পড়ুন: ইংরেজি পড়ার আগে শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজি ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে পুরোটাই বিফলে যাবে। অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও কী পড়ছেন তা বুঝতে চেষ্ঠা করুন।
৬। সারমর্ম বা সামারাইজিং করুন: বড় কোন লেখাকে ছোট করে নিলে তা সহজেই মনে থাকে। এছাড়া কোন একটি বড় পাঠকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিয়ে পড়লে তা সহজে মনে থাকবে।
৭। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি হাইলাইট করুন: পড়ার সময় মার্কার পেন পাশে রাখুন। পাঠের গুরুত্বপূর্ণ অংশসমুহ মার্ক করে রাখুন। এতে ঐ অংশে মনেযোগ বাড়বে এবং পরীক্ষার পূর্বে রিভিশন দেয়ার সময় সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে।
৮। বিরতি দিন এবং হাঁটুন: একটানা অনেকক্ষণ পড়লে অস্থিরতা চলে আসবে। বেশ কিছুক্ষণ পড়ার পর ১৫-২০ মিনিট হেঁটে আসুন। এতে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাবে।
৯। নিজেই শিক্ষক হয়ে যান: নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে উঠুন। কি পড়লেন, কি মুখস্থ করলেন ইত্যাদি বুঝতে নিজেই শিক্ষক হিসেবে মূল্যায়ন করুন। নিজেই পরীক্ষা দিন এবং তা যাচাই করুন।
১০। নোট করুন: যাই শিখবেন তাই লিখে ফেলুন, নোট করুন। লেখা হলে তা দ্রুত মাথায় ঢুকে যাবে এবং সহজে ভুলবেন না। এছাড়া গুছিয়ে নোট করলে পরীক্ষার সময় সহজে রিভিশন দিতে পারবেন।
১১। গ্রুপ ষ্টাডি করুন: নিজে শিখার পর পাঠটি অন্যকে শিখানোর চেষ্ঠা করুন, তাতে অনেক দিন মনে থাকবে। ইংরেজী ভাষা শিখতে গ্রুপ ষ্টাডি সবচেয়ে কার্যকরী। প্রতিদিন ২-৩জনে মিলে গ্রুপ ষ্টাডি করলে নিজের ভুলগুলিও শুধরে নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে গ্রুপ ষ্টাডি করার জন্যে একটি পৃথক ও নির্দ্দিষ্ট সময় নির্ধারন করে নিতে হবে।
তবে উল্লেখ্য যে- আধুনিক প্রযুক্তির সু-ব্যবহারে সুফল ও অপব্যবহারে কুফল দুটুই আছে। যেমন- মোবাইল আসক্তি বা মোবাইল গেম, ইন্টারনেট আসক্তি, টিভি, কম্পিউটার স্ক্রিনের রেডিয়েশন আমাদের মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে যা স্বাভাবিক মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে ও পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়। তবে শিশুদের জন্যে এসব অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে সাবধান হতে হবে ও শিশুদের নিরাপদ রাখতে হবে।
সহজে পড়া মনে রাখার প্রদত্ত কৌশলগুলি আপনার কাজে আসলে আমরা অত্যন্ত খুশি হব আর প্রিয়জন বা পরিচিত জন কাজে আসতে পারে মনে হলে অবশ্যই তাকে শেয়ার করবেন।