গত নভেম্বরে (২০১৯) চীনের উহান প্রদেশে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বিশ্বের সবকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ব্যাপকতা এখনি থামাতে না পারলে শীঘ্রই আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ভাইরাস সারা বিশ্বে তাণ্ডব চালিয়ে প্রতি মাসে কেড়ে নিচ্ছে কয়েক লক্ষ তাজা প্রাণ।
শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, গরীব, ধনী, সাদা-কালো কেউই রেহাই পাবে না এই অতি ক্ষুদ্র জীবানুর তাণ্ডবলীলা থেকে।
"SARS-Cov-2" নামের ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করার জন্যে এখনো কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি, নেই কোন কার্য্যকরী এন্টিবায়োটিও। মানব শরীরে আল্লাহ প্রদত্ত এন্টিবডিই এখন পর্যন্ত শেষ ভরসা।
এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার আবিষ্কৃত না হওয়ায় সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে এর সংক্রমনের গতিকে হ্রাস করাই একমাত্র পথ। আর এই পথে চলেতে গিয়েই সামাজিক জীব মানুষ আজ অসামাজিক হয়ে পড়েছে। পৃথিবী নামক গ্রহের দেশগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শহর থেকে শহর এবং গ্রাম গুলিও আলাদা হয়ে গেছে। ভাইরাসটি বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ায় মানুষ ঘর থেকে বেড় হতে পারছে না। একান্ত প্রয়োজনে বেড় হতে পিপিই (পারসোনল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) পড়তে হচ্ছে। তারপরও ডাক্তার থেকে সকল পেশাজীবি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
এই মহামারী প্রতিরোধে কোন কার্য্যকরী ব্যবস্থা না থাকলেও আমাদের কিছুটা সচেতনতা বাঁচিয়ে দিতে পারে আমাদেরকে, আমাদের প্রিয়জনদের এবং আরো লাখো-কোটি মানুষের প্রাণ। তাই করোনা ভাইরাসের এই মহামারী থেকে নিজে ও বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান এবং আত্নীয়, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই কিভাবে নিরাপদ থাকবেন এ বিষয়ে এখানে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধের এই চার্টটি নীচের এ্যাটাচমেন্ট থেকে পিডিএফ বা ইমেইজ ফাইল আকারে ডাউনলোড করে আপনার মোবাইলে রাখতে পারেন অথবা পরিবারের সচেতনতার জন্যে A4 কাগজে প্রিন্ট করে ঘরে টনিয়ে রাখতে পারেন। আবার জন সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার বা নিজ এলাকায় লিফলেট হিসেবে বিতরন করতে পারেন।
আক্রান্ত ব্যাক্তির হাঁচি, কাশি, নিশ্বাস থেকে করোনা সংস্পর্শে আসা লোকজনের প্রথমে চোখ, নাক বা মুখের ভিতর দিয়ে গলায় ঢুকে সেখান থেকে শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুসে সংক্রমন ঘটায়। জীবানু শরীরে ঢুকার ৩-১৪ দিন পরে জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, শ্বাস কষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। ততদিনে হয়ত আক্রান্ত ব্যাক্তি অজ্ঞাতে রোগটি তার পরিবার ও চারপাশের লোকদের মাঝে ছড়িয়ে দেন এবং অন্যরাও এভাবে ছড়াতে থাকে। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া এর প্রতিরোধে আর কোন পথ নেই।
অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যাক্তি হাতে লাগা জীবানু টাকা, দরজার হাতল, দোকান থেকে কেনা সামগ্রী হয়ে সুস্থ লোকের হাতে চলে আসে এবং এই হাত দ্বারা যখন চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা হয় তখনি তার শরীরে সংক্রমন ঘটে যায়। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবাইকে হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করতে নিষেধ করছে এবং বারবার সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাতকে জীবনুমুক্ত করতে বলছে। এতে সংক্রমন অনেক কমানো সম্ভব। সবাইকে হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকতে হবে, হাত পরিষ্কার করতে হবে, ব্যবহৃত টিস্যু নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে।
কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার বা তার পরিবারের প্রতি কোন রকম অসৌজন্য মূলক আচরন করা যাবে না। কারন আজ না হোক কাল আপনিও এই মহামারি দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন। বরং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আক্রান্ত ব্যাক্তির সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করা ও পরিবারের কোয়ারেন্টাইনকালীন খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যাদি সর্বরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনা সংক্রমনে মৃত ব্যাক্তির শরীরেও জীবানু লেগে থাকতে পারে তাই তার দাফনে সর্তকতা অবলম্বন করে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় তার দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা রোগীদের সু-চিকিৎসা দেয়ার জন্যে আমাদের দেশের ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীগন দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং আমাদের দায়িত্বজ্ঞান হীনতার কারনে তারা সংক্রমিত হয়ে মারাও যাচ্ছেন। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা, দাফন, ত্রানসহায়তা দিচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করন, কারো রোগের লক্ষন দেখা দিলে আইসোলেশনে নেয়ার মত ঝুঁকিপূর্ন কাজ তারা করে যাচ্ছেন।
সরকারের আইইডিসিআর আক্রান্তের তথ্য সমন্বয় ও সারা দেশে আক্রান্তের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করনে কাজ করছে।
এখন জনসাধারনের জন্যে একটাই পথ খোলা আছে- “ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন”